থিসিস কি? থিসিস লেখার নিয়ম ও সম্পাদনা পদ্ধতি

থিসিস কি

থিসিস বা অভিসন্দর্ভ হল একটি দীর্ঘ পরীক্ষামূলক, তাত্ত্বিক প্রতিবেদন, যার একটি সমস্যা, পদ্ধতি, ফলাফল, এবং আলোচনার কাঠামো রয়েছে। 

অক্সফোর্ড ডিকশনারী অনুসারে, থিসিস হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির জন্য লিখিত দীর্ঘ প্রবন্ধ। থিসিস লেখার পরিধি, দৈর্ঘ্য ও প্রকৃতি ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু একটি থিসিস লেখার মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য একই থাকে।

থিসিস (Thesis) হল দীর্ঘ একাডেমিক লেখা যার সাথে ব্যক্তিগত গবেষণা জড়িত। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা পাওয়ার জন্য লেখা হয়ে থাকে। 

থিসিস কি? থিসিস লেখার নিয়ম, azhar bd academy

বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্পন্ন করার অংশ হিসেবে মূলত থিসিস লেখা হয়। এই থিসিস  বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠিত বিষয়ের ওপর বা কয়েকটি টপিক নিয়ে ৩০-৫০ পাতার মধ্যে বিশদ তত্ত্বসহ লেখা হয়। একজন বা কয়েকজন সুপারভাইজরের তত্বাবধানে থিসিসের কাজ সম্পন্ন হয়।  

থিসিস লেখা সম্পন্ন হলে, তা কমিটি, সুপারভাইজার, অন্যান্য অধ্যাপকের সামনে প্রেজেন্টেশন আকারে উপস্থাপন করা হয়। সবশেষে, ভাইভা নেওয়ার মাধ্যমে থিসিস এর ফলাফল দেওয়া হয়। স্নাতক শেষ করার পর এই থিসিস প্রায় আর কাজে আসে না। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ডে থেকে যায়।


থিসিস লেখার নিয়ম

একটি থিসিস নিম্মোক্ত উপাদানগুলো নিয়ে গঠিত। যেমন,


১. শিরোনাম পাতা (Title page)

একদম শুরুতে টাইটেল পেজ বা শিরোনাম পাতা থাকে যেখানে থিসিসের আনুসাঙ্গিক বিষয়বস্তু লেখা হয়। এটিতে অন্তর্ভুক্ত থাকে নিম্মলিখিত বিষয়গুলো।
  • থিসিসের শিরোনাম
  • লেখকের নাম
  • থিসিস সুপারভাইজার নাম
  • স্থান বা প্রতিষ্ঠান
  • ডিগ্রীর নাম
  • তারিখ
শিরোনাম পৃষ্ঠায় একটি স্বাক্ষরিত ঘোষণা থাকা উচিত, যে থিসিসে উপস্থাপিত কাজ প্রার্থীর একান্ত নিজস্ব। যেমন,

‘‘আমি, [সম্পূর্ণ নাম] নিশ্চিত করছি যে এই থিসিসে উপস্থাপিত কাজটি আমার নিজস্ব। এটি করতে অন্যান্য উৎস থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে, এবং আমি নিশ্চিত করছি যে এটি থিসিসে নির্দেশিত হয়েছে।’’

২. সারাংশ (Abstract)

থিসিসের সারাংশ যথাসম্ভব সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। একটি সারাংশে নিম্মোক্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যেমন, সমস্যা, পদ্ধতি, ফলাফল এবং উপসংহার। সাধারণত, সারাংশ ১০০ থেকে ১৫০ শব্দের মধ্যে হলে ভালো হয়।

৩. সুচিপত্র (Table of contents)

আপনার থিসিসের মূল বিষয় শিরোনাম এবং উপশিরোনাম পৃষ্ঠা নম্বর সহ তালিকাভুক্ত করুন। সূচিপত্রে স্বীকৃতি, পরিশিষ্ট, এবং গ্রন্থপঞ্জি ইত্যাদি তালিকাভুক্ত করুন। এছাড়া থিসিসের পরিসংখ্যান তালিকা. চিত্র সংখ্যা, চিত্র শিরোনাম এবং পৃষ্ঠা সংখ্যাও অন্তর্ভুক্ত করুন।

থিসিসের প্রধান অংশ

থিসিসের প্রধান অংশ ভূমিকা, সমস্যা অনুসন্ধান, থিসিস কোশ্চেন, গ্রন্থ পর্যালোচনা, পদ্ধতি, ফলাফল, আলোচনা, উপসংহার, এবং সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত থাকে।


৪. ভূমিকা (Introduction)

থিসিসের ভূমিকায় বর্ণনা করুন (১) তদন্তের উদ্দেশ্য, (২) সমস্যাটি তদন্ত করা হচ্ছে, (৩) সমস্যার পটভূমি (প্রসঙ্গ এবং গুরুত্ব), (৪) থিসিস পদ্ধতি, এবং (৫) আপনার অধ্যয়নের সাফল্যের মানদণ্ড ইত্যাদি।

৫. সমস্যা অনুসন্ধান (Problem Search)

সমস্যা অনেক ভাবেই খুঁজে পেতে পারেন। আপনি যে বিষয়  নিয়ে কাজ করতে চান ঐ বিষয়ে প্রচুর আর্টিকেল (কনফারেন্স/জার্নাল) পড়ুন। এটা সহজে সমস্যা খুঁজে পাওয়ার প্রথাগত নিয়ম। প্রথমে অনেক বড় বড় সমস্যা আসতে পারে সেখান থেকে সবচেয়ে narrow পার্ট নিয়ে আপনার কাজটি এগিয়ে নেন। আগে আপনার পছন্দের টপিকের জন্য কারেন্ট পেপারগুলো পড়ুন এবং সেগুলো থেকে শর্ট রিভিউ করে রাখুন। এটি সবচেয়ে কম সময়ে ভালো একটি সমস্যা খুঁজে পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায়।


যেমন ধরুন আপনি বাংলাদেশের শিক্ষার সমস্যা নিয়ে একটি স্টাডি করবেন বলে স্থির করছেন। তখন শিক্ষার কোন স্তরের সমস্যা নিয়ে থিসিস করবেন তা চিন্তা করুন। এক্ষেত্রে ভালো হবে একটি মাত্র টাইপ নিয়ে কাজ করা। যেমন ধরুন, প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যা, মাধ্যমিক শিক্ষার, উচ্চ শিক্ষার অথবা কারিগরি শিক্ষার সমস্যা এগুলোর যেকোন একটি পার্ট নিয়ে থিসিস করতে পারেন।

৬. গ্রন্থ পর্যালোচনা (Literature Review)


গবেষণা হয় মূলত তিন ধরণের: মৌলিক গবেষণা, রিভিউ বা পর্যালোচনা এবং সার্ভে গবেষণা। মৌলিক গবেষণা লেখা হয় মূল গবেষণার উপর ভিত্তি করে। আর মূল গবেষণার মধ্যে পরে, ল্যাবরেটরী ভিত্তিক গবেষণা, কম্পিউটার ব্যবহার করে গবেষণা, এই গুলোর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ক্ষেত্র হচ্ছে ডাটা সাইন্স ফিল্ড এবং সিমুলেশন রিসার্চ। মোট কথা হচ্ছে, যে কাজ করে আমি কোন ডাটা পাবো, তাই হচ্ছে মূল গবেষণা। এই কারণে এই সব ডাটাকে বলা হয় প্রাইমারি ডাটা। কিন্তু এইসব ডাটা যখন কোন জার্নালে বা বই আকারে পাবলিশ হয়, তখন অন্য কেউ যদি এই একই ডাটা দিয়ে তার ডাটার সাথে কাজে করে, তখন তা হয়ে যায় সেকেন্ডারি ডাটা।

এই সেকেন্ডারি ডাটা দিয়েই মূলত রিভিউ পেপারের কাজ করতে হয়। যখন আপনি সমস্যা বের বের করতে পারবেন তখন আপনাকে দেখাতে হবে আপনার গবেষণাটি কেন দরকার। অর্থাৎ আপনাকে বোঝাতে হবে আপনার রিসার্চের মোটিভেশন কী? সেজন্য এই সমস্যার উপর ইতোপূর্বে কীরকম কাজ হয়েছে এবং কাজগুলোকে আপনার রিভিউ করতে হবে। লিটারেচার রিভিউ সময় নিয়ে করতে হয় এবং রেফেরেন্স পেপারের জার্নালের মান, এবং তাঁরা কতটা রিলায়েবল এটি মাথায় রাখতে হয়।


                           সেকেন্ডারি ডেটার উৎস

৭. পদ্ধতি (Methodology)

এই অংশে মূলত পরিসংখ্যানিক বিশ্লেষণ করা হয়। একজন গবেষক নানা ভাবে তার গবেষণা করতে পারেন। যে কোন গবেষণার জন্য অনেক ধরণের পরীক্ষিত কৌশল থাকে। কৌশলগুলো লেখার সময় উদাহরণ হিসেবে নিজের গবেষণার কোন উদাহরণ দিয়ে তা বিস্তারিত কোথায় কোন সেকশনে, কোন চ্যাপ্টারে আছে সেটা উল্লেখ করে একটি সংযোগ তৈরি করে দিতে হয়। 


৮. ফলাফল (Results)

ফলাফলগুলো টেবিল এবং গ্রাফ সহ উপস্থাপন করুন। ফলাফলের নিদর্শন এবং গুণমান চিহ্নিত করুন এবং নির্ভুলতা অনুমান করুন।

৯. আলোচনা (Discussion)

ফলাফলের অর্থ এবং এটির তাৎপর্য কী তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন। তাত্ত্বিক প্রত্যাশার সাথে ফলাফলের তুলনা করুন এবং অপ্রত্যাশিত কিছুর জন্য জবাবদিহি করুন।

১০. উপসংহার (Conclusions)

উপসংহারে মূল সমস্যা বিবৃতি সম্পর্কিত ফলাফল পর্যালোচনা করুন। আপনি ভূমিকায় যে সাফল্যের মানদণ্ড দিয়েছেন তার আলোকে অধ্যয়নের সাফল্যের মূল্যায়ন করুন।

১১. সুপারিশ (Recommendations)

ভবিষ্যতের কাজের জন্য নির্দেশনা সুপারিশ করুন।

থিসেসের শেষ অংশ (End)

১২. স্বীকৃতি (Acknowledgments)

এখানে আপনার উপদেষ্টা, পৃষ্ঠপোষক, তহবিল সংস্থা, সহকর্মী, প্রযুক্তিবিদ এবং আরও অনেকের সহায়তার স্বীকার করুন।

১৩. পরিশিষ্ট (Appendixes)

পরিশিষ্টে বিস্তারিত গণনা, পদ্ধতি, ছক, সারণী, তালিকা ইত্যাদি স্থান পায়। পাঠক এটি ব্যবহার করে মূল বিষয়ের গভীরে যেতে সক্ষম হবে।

১৪. গ্রন্থপঞ্জি (Bibliography)

আপনার অধ্যয়নে উল্লেখ করা যেকোনো সংগ্রহীত তথ্য বা কাজকে বর্ণানুক্রমিকভাবে তালিকাভুক্ত করুন। এটি করতে গ্রন্থপঞ্জী এবং ফুটনোট এর ফর্ম্যাটগুলো অনুসরণ করুন।

থিসিস সম্পাদনা পদ্ধতি


১. ফন্ট (font)
থিসিস খসড়া আকারে লেখার পর এটিকে পুনরায় মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ডের মাধ্যমে টাইপ করতে হয়। টাইপ করার সময় এটির ইংরেজি ফন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন টাইমস নিউ রোমান বা আরিয়াল। তবে বাংলা টাইপ করতে অবশ্য ফন্ট হিসেবে সুটুনি এমজে ব্যবহার করত হবে। ফন্টের আকার বা সাইজ ইংরেজির জন্য ১২ এবং বাংলা জন্য ১৪ স্টান্ডার্ড হিসেবে ধরা হয়।

২. কাগজ (paper)
থিসিসের কাগজ অবশ্যই A4 (210 x 297 মিমি) সাইজের ব্যবহার করতে হবে। সাধারণ ভালো মানের এবং পর্যাপ্ত অস্বচ্ছতার সাদা কাগজ ব্যবহার করতে হবে। কাগজের উভয় অংশেই ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩. মার্জিন (Margin)
থিসিসের বাঁধাই প্রান্তে মার্জিন ৪০ মিমি (১.৫ ইঞ্চি) এবং অন্য তিন অংশে মার্জিন ২০ মিমি (.৭৫ ​​ইঞ্চি) এর কম হওয়া উচিত নয়।

৪. পৃষ্ঠা সংখ্যা (Page no.)
সমস্ত পৃষ্ঠাগুলো একটি অবিচ্ছিন্ন ক্রমানুসারে সংখ্যা করা আবশ্যক অর্থাৎ প্রথম খণ্ডের শিরোনাম পৃষ্ঠা থেকে থিসিসের শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত ধারাবাহিক সংখ্যা দিতে হবে। এই ক্রমটিতে মানচিত্র, ডায়াগ্রাম, ফাঁকা পৃষ্ঠা ইত্যাদি সহ ভলিউমের মধ্যে আবদ্ধ সমস্ত কিছু অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।

৫. থিসিস বাঁধানো (Thesis binding)
থিসিস প্রিন্ট আউট করার পর একটি সুন্দর মাঝারি নীল কাপড় কাভার হিসেবে ব্যবহার করুন। কাপড়টিতে যেন জল-প্রতিরোধী উপাদান থাকে এবং কাভার যথেস্ট শক্ত হতে হবে। কাভার পেজের উপরে না লিখে বরং থিসিসের বাম পাশে মেরুদন্ডে  16 বা 18 পয়েন্ট ফন্টে ডিগ্রী, বছর এর নাম সোনার অক্ষরে লিখতে হবে।




Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন