থিসিস এবং গবেষণা কী? এদের মধ্যে পার্থক্য

আপনি নিশ্চয়ই থিসিস এবং রিসার্চ পেপার সম্পর্কে শুনেছেন। আপনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর বা ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করবেন, তখন আপনাকে থিসিস বা গবেষণাপত্র জমা দিতে হবে। অনেকেই থিসিস এবং গবেষণাপত্র একই মনে করেন, কিন্তু তা না। 

থিসিস হচ্ছে মূলত অনার্স বা ডিগ্রি সমাপ্তের সময়, পঠিত বিষয়ের তথ্যমূলক বিশদ মৌলিক বিবরণ। অন্যদিকে, গবেষণাপত্র বা রিসার্চ পেপার বিভিন্ন উচ্চতর গবেষণার প্রয়োজনে করা হয়। এই পোস্টে, আমরা ‘‘থিসিস এবং রিসার্চ পেপারের মধ্যে পার্থক্য’’ নিয়ে আলোচনা করব।

থিসিস এবং গবেষণা কী? এদের মধ্যে পার্থক্য, azhar bd academy

থিসিস কি?

থিসিস (Thesis) হল একটি দীর্ঘ একাডেমিক লেখা যার সাথে ব্যক্তিগত গবেষণা জড়িত। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা সমাপ্ত হওয়ার অংশ হিসেবে লেখা হয়ে থাকে। 

অক্সফোর্ড ডিকশনারী অনুসারে, থিসিসকে একটি নির্দিষ্ট বিষয় বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির জন্য লিখিত বিষয়ে দীর্ঘ প্রবন্ধ হিসাবেও সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। থিসিস লেখার পরিধি, দৈর্ঘ্য ও প্রকৃতি ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু থিসিস লেখার মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য একই থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্পন্ন করার জন্য থিসিস লেখা হয়। থিসিসে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে যে বিষয়ে পড়ানো হয় সে সে বিষয় থেকে একটি নির্দিষ্ট টপিক এর উপর বা কয়েকটি টপিক নিয়ে ৩০-৫০ পেজের মধ্যে (ভিন্নও হতে পারে) তা বর্ণনা সহকারে লেখা হয়। একজন বা কয়েকজন সুপারভাইজরের তত্বাবধানে থিসিসের কাজ সম্পন্ন করতে হয়। 


থিসিস লেখা সম্পন্ন হলে তা কমিটি, সুপারভাইজার, এবং অন্যান্য অধ্যাপকের সামনে প্রেজেন্টেশন আকারে উপস্থাপন করা হয়। স্নাতক শেষ করার পর এই থিসিস আর কাজে আসে না। এটি শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ডে থেকে যায়।


গবেষণা কি?

রিসার্চ বা গবেষণা হল কোনো নির্দিষ্ট টপিকের উপরে করা বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া এবং নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশা। মূলত কোনো বিষয়ে নতুনত্ব আনার জন্য গবেষণা করা হয়। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য থাকে বাস্তব জীবনের কোন সমস্যার সমাধান করা। এটি নিজ থেকে করা হয়। ফলে এর জন্য কোনো সুপারভাইজার বা কমিটি দরকার নেই। 

রিসার্চ বা গবেষণা নিজ থেকে এবং নিজ উদ্যোগে করা হয়। তাই যে কোনো সময়ে যে কোনো পর্যায়ে এটি করা যায়। রিসার্চ পেপার বিশ্বের বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশ করা যায়। এটিতে ক্ষেত্র বিশেষ কম লেখা হলেও তা গুনগতসম্পূর্ন লেখা হয় কারন যারা রিসার্চ পেপার পড়বে তারা পূর্ব থেকেই এই বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞ। 

রিসার্চ করার মূল উদ্দ্যেশ্যই হল কোনো বিষয়ের নতুনত্ব আনা। যেমন: আপনি বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষা কাঠামো পরিবর্তনে রিসার্চ করে নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছেন যা পূর্বে ছিল না। এই নতুনত্বের কারনে ছাত্রছাত্রীরা এখন সহজে শিখতে ও বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারবে। এছাড়া রিসার্চ পেপার উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে কাজে লাগে এবং এটিতে স্কলারশিপ বা শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া যায়।

থিসিস ও গবেষণার পার্থক্য

থিসিস ও গবেষণা ‍উভয় মূলত একাডেমিক লেখা। এদের অনুরূপ অভ্যন্তরীণ কাঠামো এবং ভূমিকা, সাহিত্য পর্যালোচনা, গবেষণা পদ্ধতি, ডেটা বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা, ফলাফল, উপসংহার ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে উভয়ের উদ্দেশ্য, লেখার শৈলী এবং নির্দিষ্ট উপাদানগুলো পৃথক হয়ে থাকে। নিম্মে থিসিস ও গবেষণার কিছু পার্থক্য দেওয়া হল।


১. একটি থিসিস লেখার উদ্দেশ্য বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী লাভ করা। একটি গবেষণাপত্র লেখার উদ্দেশ্য জ্ঞান প্রসারিত হয়।

২. যেহেতু থিসিস ডিগ্রি পাওয়ার জন্য লেখা হয় তাই এটি সাধারণত একটি গবেষণা পত্রের চেয়ে দীর্ঘ হয়।

৩. থিসিস সর্বদা কারো তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয় অর্থাৎ থিসিস সম্পূর্ণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর জন্য একজন সুপারভাইজার নিয়োগ করে। কিন্তু গবেষণার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই কোনো সুপারভাইজার নিয়োগ দেওয়া হয় না।

৪. থিসিস জমা দেওয়ার পরে প্রেজেন্টেশন ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে থিসিসটি সম্পন্ন করা হয়। মৌখিক পরীক্ষায় বোর্ডের সামনে থিসিস উপস্থাপন এবং তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। 

৫. থিসিসের বিষয়বস্তু এবং একটি মৌখিক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত ফলাফল দেওয়া হয় । কিন্তু গবেষণাপত্রের প্ল্যাজারিজম চেক এবং গবেষণা পত্রের বিষয়বস্তু যাচাই-বাছাই শেষে গবেষণাপত্রটির ফলাফল দেয়া হয়।

৬. গবেষণাপত্রের তুলনায় থিসিসের জন্য মৌলিকতার চাহিদা অনেক বেশি। থিসিসের জন্য একটি বিষয় নির্বাচন করার সময় লেখককে অবশ্যই ক্ষেত্রের কিছু প্রাসঙ্গিক নতুন তথ্য বা ধারণার ইনপুট বিবেচনা করতে হবে।

Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন