নেপোলিয়ন বোনাপার্ট কে ছিলেন?

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট কে?

ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। ইতিহাসে তিনি আজও বিখ্যাত হয়ে আছেন তাঁর অসীম বীরত্বের জন্য। নেপোলিয়ান বোনাপার্ট ১৫ আগষ্ট, ১৭৬৯ সালে ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ কর্সিকায় জন্মগ্রহণ করেন। ফরাসি ভাষায় তাঁর নাম নাপোলেওঁ বোনাপার্ত। তাঁর পিতা কার্ল ডি মারিয়া বোনাপার্ট এবং মা মারিয়া লেটিজিয়া রামোলিনো।

‘‘তোমরা আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদেরকে একটি সভ্য, শিক্ষিত জাতির জন্মের প্রতিশ্রুতি দেব।’’ 

এটি ছিল নেপোলিয়নের বিখ্যাত উক্তি। তিনি বাল্যকাল থেকেই খুব মেধাবী ছিলেন।অঙ্ক, ইতিহাস, এবং ভূগোল বিষয়েও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী। শিক্ষাজীবন শুরু করেন ব্রায়েনের একটি সামরিক কলেজ থেকে। সামরকি কলেজে পাঁচ বছর পড়াশোনা করে চলে যান প্যারিসের সামরিকে একাডেমিতে।

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। ফরাসি সম্রাট, azhar bd academy
Image source: pixabay.com

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এর সামরিক জীবন

নেপোলিয়ান বোনাপার্ট ১৭৮৫ সালে প্যারিস সামরিক একাডেমি থেকে স্নাতক শেষ করে আর্টিলারি অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করে। তিনি ফরাসী সেনাবাহিনীর আর্টিলারি রেজিমেন্টের দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট হন। পরের বছর তিনি আবারও কর্সিকায় ফিরে আসেন।ফরাসী বিপ্লব শুরু হয় ১৭৮৯ সালে। তিন বছর ধরে চলা এই বিপ্লব রাজতন্ত্রকে উৎখাত করে ফরাসী প্রজাতন্ত্রের ঘোষণা দিয়েছিল। রাজা ষোড়শ লুই ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের শেষ রাজা ছিলেন। ১৭৯২ সালে ফরাসি রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন।

ফরাসি বিপ্লব শুরুর আগ থেকেই নেপোলিয়ান বোনাপার্ট সামরিক ছুটিতে ছিলেন। এই সময় তিনি কর্সকায় নিজ বাড়িতে অবস্থান করেন। যেখানে তিনি গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দল জ্যাকবিন্সের সাথে যুক্ত হন। ছুটি শেষে ১৭৯৩ সালে তিনি পূনরায় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং রাজনৈতিক দল জ্যাকবিন্সের পক্ষ ত্যাগ করেন। ফরাসি বিপ্লবের পর রাজনৈতিক দল জ্যাকবিন্স স্বল্প সময়ের জন্য ক্ষমতায় এসেছিল। এই সময় দলটি সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। সৌভাগ্যক্রমে নেপোলিয়ন জ্যাকবিন্সের অনুগ্রহ লাভ করে, যার ফলে তিনি তাঁর ফাঁসির দন্ড এড়াতে সক্ষম হন। প্রতিদান স্বরুপ, তিনি ১৭৯৫ সালে, পাল্টা বিপ্লবী যোদ্ধাদের হাত থেকে জ্যাকবিন্স সরকারকে রক্ষা করেন।

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট কে?, azhar bd academy
Image source: pixabay.com

তাঁর সাহসিকতার পুরষ্কার হিসেবে তাঁকে সেনাবাহিনীর কমান্ডার মনোনিত করা হয়। সেই সাথে তিনি সরকারের সামরিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। ফ্রান্সের বিপ্লবী সরকার সেই সময় ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে সামরিক দ্বন্ধে সম্পৃক্ত হয়। নেপোলিয়ান অসীম সাহসকিতার সাথে অস্ট্রিয়ার বিশাল সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন। অস্ট্রিয়া ছিল ফ্রান্সের প্রধান প্রতিদ্বন্ধি।

নেপোলিয়ন ভারতের সাথে ব্রিটিশ বাণিজ্য রুট নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াসে মিশর আক্রমণ করার প্রস্তাব করেন। জুলাই ১৭৯৮ সালে, পিরামিডের যুদ্ধে নেপোলিয়নের সেনারা মিশরের সামরিক শাসক মামলুকদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে। ১৭৯৯ এর গোড়ার দিকে নেপোলিয়নের সেনাবাহিনী অটোমান সাম্রাজ্য শাসিত সিরিয়ায় আক্রমণ শুরু করে, কিন্তু তাঁর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ফ্রান্সে তখন রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করে। এর ফলে নেপোলিয়ন মিশর থেকে তাঁর সেনাবাহিনী ত্যাগ করে ফ্রান্সে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

১৮০২ সালে একটি সাংবিধানিক সংশোধনী এনে নেপোলিয়নকে আজীবনের জন্য রাষ্ট্রদ্রুত করা হয়। এর দু'বছর পরে, ১৮০৪ সালে, তিনি প্যারিসের নটরডেমের ক্যাথিড্রালে এক জমকালো অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের সম্রাট হিসেবে মুকুট পরে।

নেপোলিয়নের পতনের কারণ

১৮০৪ সাল থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত তিনি ফ্রান্সের সম্রাট ছিলেন। তাঁর রাজত্বকালে ফ্রান্স অনেক শক্তিশালী ছিল। ১৮১২ সালে তিনি রাশিয়া আক্রমণ করে বাজেভাবে পরাজিত হন। পরের বছর তিনি নিজ দেশেই অস্ট্রিয়া, রাশিয়া, ব্রিটেন, পর্তুগাল, সুইডেন, স্পেন ও জার্মান দ্বারা আক্রমণের স্বীকার হন। এই সম্মিলিত আক্রমণের মুখে ফ্রান্স পরাজিত হয় এবং সম্রাট নেপোলিয়ানকে ইতালির এলবা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। তিনি প্রায় ১ বছর পর পালিয়ে গিয়ে আবারও ফ্রান্সের ক্ষমতা দখল করেন। 

১৮১৫ সালে ওয়াটার লু যুদ্ধে পরাজিত হলে, তাঁকে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের প্রত্যন্ত ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত দ্বীপ সেন্ট হেলেনা নির্বাসন দেওয়া হয়। তিনি ১৮২১ সালের ৫ মে, সেন্ট হেলেনা দ্বীপে মাত্র ৫১ বছর বয়সে মারা যান।

নেপোলিয়নকে সেই দ্বীপে সমাহিত করা হয়েছিল। কিন্তু ১৮৪০ সালে, তার দেহাবশেষ ফ্রান্সকে ফেরত দেওয়া হয় এবং প্যারিসের লেস ইনভালাইডসে একটি ক্রিপ্টে সমাহিত করা হয়। যেখানে অন্যান্য ফরাসি সামরিক নেতাদের দাফন করা হয়েছিল। ১৮২১ সালে নির্বাসন অবস্থায় সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন নেপোলিয়ান বোনাপার্ট।

Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন