চে গুয়েভারা কে?

চে গুয়েভারা ছিলেন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অগ্রনায়ক। তিনি ছিলেন একজন আর্জেন্টেনীয় মাক্সবাদী, চিকিৎসক, কূটনৈতিক এবং কিউবার বিপ্লবের অগ্রনায়ক।

চে গুয়েভারা

চেগুয়েভারা ১৪ জুন, ১৯২৮ সালে, আর্জেন্টিনার রোজারিওতে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন আর্নেস্তো গেভারা লিনচ এবং মাতা সিলিয়া দে সেরনা। পিতা-মাতার ৫ সন্তানের মধ্যে চে গুয়েভারা ছিলেন সবার বড়।

যদিও ‘চে’ তার প্রকৃত নাম নয়, তবুও এটিই তাঁর সবচেয়ে বেশি পছন্দের নাম। স্প্যানিশ ভাষায় ‘চে’ শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রিয়। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি তার স্বাক্ষর হিসেবে চে ব্যবহার করতেন । ১৯৫৫ সালে তিনি প্রথম স্ত্রী হিলদা গাদিয়াকে বিয়ে করেন এবং মেক্সিকোতে বসবাস শুরু করেন। চে পাঁচ সন্তানের পিতা ছিলেন।

চে গুয়েভারা কে?, azhar bd academy
Image source: pixabay.com

চেগুয়েভারা ছোট বেলা থেকেই সাঁতার, ফুটবল, শুটিং, সাইক্লিং, রাগবি সহ অনেক খেলায় পারদর্শী ছিলেন। তবে রাগবি খেলাই তিনি সবচেয়ে ভালো খেলতেন। তাছাড়াও চে রাগবি ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন। সাইক্লিং করা তার একপ্রকার নেশা ছিল। ঘন্টার পর ঘন্টা ক্লান্তিহীন সাইকেল চালাতেন। দাবা খেলা তাঁর বাবার কাছ থেকেই শিখেন। তাঁর শখের মধ্যে ঘোড়া চালানোও অন্যতম ছিল। চেগুয়েভারা ছিলেন একজন ভ্রমণ পিপাসু মানুষ। সুযোগ পেলেই তিনি বেরিয়ে পড়তেন দেশ বিদেশে।

শিক্ষাজীবন

অনার্স শেষ করার পর গুয়েভারা আর্জন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন বিষয়ে অধ্যায়ন করেন। কিন্তু তিনি পড়া ছেড়ে ১৯৫১ সালে, তাঁর এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা ঘুরে বেড়ান। নয় মাসের ভ্রমণ শেষে তিনি পরের বছর আবারও মেডিকেল স্কুলে ফিরে আসেন। ভ্রমণটি তার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ তিনি তাঁর স্বচক্ষে দেখতে পান লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সার্বিক অসহায়ত্ব। 

চারপাশের দারিদ্রের কশাঘাত চে গুয়েভার তরুণ মনে গভীর রেখাপাত করে। একচেটিয়া পুঁজিবাদী অর্থনীতি, নব্য ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের করাল গ্রাসে এই অঞ্চল ক্রমাগত ধ্বংসের দিকে যাচ্ছিল তখন।। চে অনুভব করেন যে, পরিবর্তন অনিবার্য দরকার। আর এই পরিবর্তনের জন্য দরকার একটি সশস্ত্র বিপ্লব। 

তিনি মনে প্রানে বিশ্বাস করতেন যে বিপ্লব কেউ কাউকে প্রদান করে না এটা ছিনিয়ে আনতে হয় এবং বিপ্লব ঘটাতে হয়। কেউ কাউকে বন্দি থেকে মুক্ত করে দেয় না বরং মুক্ত নিজেদেরকেই করতে হয়। ১৯৫৩ সালে তিনি ডাক্তারি ডিগ্রি সমাপ্ত করে মানুষের সেবাই নিয়োজিত হন।

কিউবার বিপ্লব এবং চে গুয়েভারা

১৯৫৬ মেক্সিকোতে ফিদেল ক্যাস্ট্রো ও রাউল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে পরিচয় হবার পর, তিনি তাদের বিপ্লবী সংগঠনের প্রভাবান্বিত হয়ে তাদের আন্দোলনে যোগদান করেন। এই বিপ্লবী সংগঠন কিউবার তৎকালীন একনায়ক বাতিস্তাকে উৎখাত করার লক্ষ্যে আন্দোলন পরিচালনা করে।

দুই বছরব্যাপী তাদের আন্দোলনটি পরিশেষে সফল হয় এবং চে কিউবার জনগণের কাছে আপনজন হিসেবে সমাদৃত হন। কিউবার জনগনের কাছে তিনি বিপ্লবী হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৫৯ সালে এই সংগঠন ক্ষমতা দখল করলে চে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ লাভ করে।

নতুন প্রতিষ্ঠিত কিউবার মার্কসবাদী সরকারে বিপ্লবী সেনাবাহিনীতে ছিলেন। এছাড়া তিনি বহু বাণিজ্যিক মিশনে কিউবার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তিনি সমস্ত ধরণের সাম্রাজ্যবাদ ও নব্য উপনিবেশবাদ বিরোধিতা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ নীতির বিপক্ষের ধরুন পশ্চিমে সুপরিচিত হয়েছিলেন। তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এগ্রিয়ারিয়ান রিফর্মের শিল্প বিভাগের প্রধান, কিউবার ন্যাশনাল ব্যাংকের সভাপতি এবং শিল্পমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

চেগুয়েভারার বিখ্যাত উক্তি

  • দেশের শিক্ষাক্ষেত্র একেবারে প্রান্তীয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। গরীব এবং ধনী একই শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। যাদের টাকা আছে শুধু তারাই শিক্ষিত হবে এমনটা যেন  না হয়।
  • আমরা কার জন্য বেঁচে থাকব সেটা আমরা নিশ্চিত হতে পারি না যতক্ষণ না আমরা তার জন্য মরতে প্রস্তুত থাকি।
  • বিপ্লব গাছের আপেল নয় যে পাকবে আর পড়বে। বিপ্লব অর্জন করে নিতে হয়।
  • নীরবতা হচ্ছে একধরনের যুক্তি যা গভীর তথ্য বহন করে থাকে।
  • আমি কোনো মুক্তিযোদ্ধা নই। মুক্তিযুদ্ধ বাস্তবে কখনো হয় না যতক্ষণ মানুষ নিজে মুক্তিকামী হয়।
  • নতজানু হয়ে বাঁচার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়।
  • বিপ্লবী হতে চাও? বিল্পবের প্রথম শর্ত হলো শিক্ষিত হওয়া।

Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন