আলোর প্রতিফলন কি? সংজ্ঞা, প্রকার ও সূত্র

আলোর প্রতিফলন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। আমরা চোখের সামনে যা কিছু দেখতে পাই, তার সবই আলোর প্রতিফলনের ফল। সূর্যের আলো বা লাইটের আলো যখন কোন বস্তুর ওপর পড়ে, তখন বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে আসলে, আমরা দেখতে পাই।

এই আর্টিকেলে, আলোর প্রতিফলনের সংজ্ঞা, প্রকার, সূত্র, এবং উদাহরণ বিস্তারিত বর্ণনা করা হল।

আলোর প্রতিফলন কি?

একটি স্বচ্ছ ও মসৃণ মাধ্যমে আলোকরশ্মি একই বেগে সরলপথে চলে। তবে, আলোক রশ্মি যখন এক মাধ্যমে দিয়ে চলতে চলতে অন্য এক মাধ্যমের কোন তলে আপতিত হয়, তখন দুই মাধ্যমের বিভেদতল থেকে কিছু পরিমাণ আলোকরশ্মি প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে, এ ঘটনাকে আলোর প্রতিফলন বলে। 

আলোর প্রতিফলন কি? সংজ্ঞা, প্রকার ও সূত্র, azhar bd academy

অর্থাৎ কোনো বস্তুর উপর আলো আপতিত হলে, তার পৃষ্ঠ থেকে আলো ফিরে আসার ঘটনাকে আলোর প্রতিফলন (reflection of light) বলে। 


সমতল আয়নায় আলো প্রতিফলিত হয় এবং তাই আমরা আয়নায় আমাদের ভার্চুয়াল চিত্র দেখতে পাই। দর্পণে আলোর প্রতিফলনের জন্যেই প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয়।

আলোর প্রতিফলন সাধারণত দুটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেমন, আলোর আপতন কোণ ও মাধ্যমগুলোর প্রকৃতি। আপতিত রশ্মি যত বেশি কোণে আপতিত হবে এবং প্রতিফলক যত বেশি মসৃণ হবে আলোর প্রতিফলন তত বেশি হবে। পক্ষান্তরে, অমসৃণ কিংবা স্বচ্ছ প্রতিফলক থেকে আলোর প্রতিফলন কম হয়।

আলোর প্রতিফলনের প্রকারভেদ

কোন পৃষ্ঠ থেকে কীভাবে আলো প্রতিফলিত হবে তা নির্ভর করে প্রতিফলক পৃষ্ঠের প্রকৃতির ওপর। প্রতিফলক পৃষ্ঠের প্রকৃতি আনুযায়ী আলোর প্রতিফলন দু ধরনের হতে পারে। যেমন, 

নিয়মিত প্রতিফলন
ব্যাপ্ত প্রতিফলন।

১. নিয়মিত প্রতিফলন
যখন একগুচ্ছ সমান্তরাল আলোকরশ্মি কোন মসৃণ পৃষ্ঠে আপতিত হয়ে প্রতিফলনের পর সমান্তরাল থাকে বা অভিসারী কিংবা অপসারীগুচ্ছে পরিণত হয়, তাকে নিয়মিত প্রতিফলন বলে। 

যেমন- সমতল দর্পণ বা আয়নায় আলোর নিয়মিত প্রতিফলন। এক্ষেত্রে প্রতিটি আলোক রশ্মির আপতন কোণ ও প্রতিফলন কোণ সমান হয়। 

২. ব্যাপ্ত প্রতিফলন
যদি একগুচ্ছ সমান্তরাল আলোক রশ্মি কোন পৃষ্ঠে আপতিত হয়ে প্রতিফলনের পর অসমান্তরাল হয় বা অভিসারী বা অপসারীগুচ্ছে পরিণত না হয়, তবে তাকে ব্যাপ্ত বা বিক্ষিপ্ত বা অনিয়মিত প্রতিফলন বলে। প্রতিফলক পৃষ্ঠ সমান্তরাল না হলে নিয়মিত প্রতিফলন হয়।


এক্ষেত্রে সমান্তরাল রশ্মিগুলো প্রতিফলকপৃষ্ঠের বিভিন্ন বিন্দুতে বিভিন্ন কোণে আপতিত হয় হওয়ায় প্রতিফলন কোণও আলাদা হয়।

আলোর প্রতিফলনের সূত্র

প্রতিফলক পৃষ্ঠ মসৃণ হলে আলোর প্রতিফলন প্রধানত ২টি সূত্র মেনে চলে। যথা-

১. আপতিত রশ্মি, প্রতিফলিত রশ্মি এবং আপতন বিন্দুতে প্রতিফলকের ওপর অঙ্কিত অভিলম্ব একই সমতলে থাকে।
২. প্রতিফলন কোণ আপতন কোণের সমান হয়।

আলোর প্রতিফলনের উদাহরণ

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেকগুলো বস্তু রয়েছে যা আলো প্রতিফলিত করতে সক্ষম। 
  • আয়না
  • চোখ
  • জল পৃষ্ঠ
  • সাদা কাগজ
  • চাঁদের আলো
  • গয়না 
  • রঙিন বস্তু
  • ধাতু

১. দর্পন বা আয়না
আয়না এমন একটি বস্তু যা তার পৃষ্ঠে পড়া আলোক বিকিরণগুলোকে সম্পূর্ণ প্রতিফলন করতে দেয়।

২. চোখ
কোন বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে আসলে, তখন আমরা তা দেখতে পাই। আলোর প্রতিফলন আমাদের চোখে দৃষ্টিশক্তি তৈরি করতে সাহায্য করে।

৩. জল পৃষ্ঠ
যখন আলোক রশ্মি পানির পৃষ্ঠে পড়ে, তখন আলোক রশ্মির একটি বড় অংশ প্রতিসৃত হয়ে পানির মধ্য দিয়ে চলে যায়, কিন্তু বাকি একটি অংশ ফিরে আসে এবং প্রতিফলন প্রদর্শন করে।


৪. চাঁদের আলো
চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই। চাঁদ থেকে নির্গত আলোক রশ্মিগুলো আসলে সূর্যের বিকিরণ যা চাঁদের পৃষ্ঠে পড়ে। এর মানে হল যে চাঁদের আলো মূলত সূর্যালোকের একটি প্রতিফলিত আলো এবং চাঁদ আলোক রশ্মি প্রতিফলিত করতে সক্ষম।

৫. রঙিন বস্তু
আলোর প্রতিফলনের কারণে আমরা বস্তুর বিভিন্ন রঙ উপলব্ধি করতে পারি। যখন কোনো বস্তুর পৃষ্ঠে আলো পড়ে, তখন আলোর একটি বড় অংশ শোষিত হয়। কিন্তু প্রতিফলিত হওয়া আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বস্তুর রঙ নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়।

৬. ধাতু
বিভিন্ন ধাতুতে আলোক বিকিরণ প্রতিফলিত করার প্রাকৃতিক ক্ষমতা রয়েছে। আলোক বিকিরণ প্রতিফলিত করার ফলে ধাতুগুলোকে চকচকে দেখায়। যেমন স্বর্ণ, হীরা ইত্যাদি।

আলোর প্রতিফলনে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা

আপতিত রশ্মি: আলোর উৎস বা বস্তু থেকে প্রতিফলিত পৃষ্ঠে যে আলোক রশ্মি পড়ে, তাকে আপতিত রশ্মি বলে।

আপতন বিন্দু : আপতিত রশ্মি প্রতিফলকের উপর যে বিন্দুতে এসে পড়ে, তাকে আপাতন বিন্দু বলে।

প্রতিফলিত রশ্মি: প্রতিফলিত পৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত হওয়ার পর যে আলোক রশ্মি উৎপন্ন হয়, তাকে প্রতিফলিত রশ্মি বলে।

আপতন কোণ: আপতিত রশ্মি এবং প্রতিফলিত পৃষ্ঠের আপতন বিন্দু থেকে স্বাভাবিকের মধ্যবর্তী কোণটিকে আপতন কোণ বলে। এটি ∠i দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।

প্রতিফলন কোণ: প্রতিফলিত রশ্মি এবং প্রতিফলিত পৃষ্ঠের আপতন বিন্দু থেকে স্বাভাবিকের মধ্যবর্তী কোণকে প্রতিফলন কোণ বলে। এটি ∠r দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।

অভিলম্ব: আপাতন বিন্দুতে প্রতিফলকের উপর অঙ্কিত লম্বকে অভিলম্ব বলে।

Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন