মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ– সংজ্ঞা, পার্থক্য

মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু কণায় একে অন্যকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ শক্তি দুইভাবে হতে পারে, একটি মহাকর্ষ অন্যটি অভিকর্ষ।

মহাবিশ্বের যে কোন দুটি বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ, তাকে মহাকর্ষ বলে, এই বলকে মহাকর্ষীয় বল বলে। অন্যদিকে, পৃথিবী তার কাছাকাছি বা তার ভূপৃষ্ঠ থাকা সকল বস্তুকে আকর্ষণ করে, এটিকে অভিকর্ষ বলে। নিম্মোক্ত আর্টিকেলে, মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ এর সংজ্ঞা, ও পার্থক্য বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ– সংজ্ঞা, পার্থক্য, azhar bd academy

মহাকর্ষ কি?

মহাকর্ষ (Gravitation) হল মহাবিশ্বের যেকোন দুটি বস্তুর মধ্যে পারস্পারিক আকর্ষণ।সহজভাবে বলতে গেলে, মহাজাগতিক সকল বস্তুর মধ্যে পারস্পারিক আকর্ষণকে মহাকর্ষ বলে। মহাবিশ্বে, প্রতিটি বস্তু একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বল দিয়ে একে অপরকে আকর্ষণ করে কিন্তু এই শক্তির খুব দুর্বল প্রকৃতির কারণে, আমরা এটি অনুভব করতে পারি না। মহাকর্ষ বলকে F = G M1M2/r2 হিসাবে প্রকাশ করা যায়। যেখানে G = মহাকর্ষীয় ধ্রুবক।


স্যার আইজ্যাক নিউটন মহাবিশ্বের দুটি বস্তুর আকর্ষণ সম্পর্কে একটি সূত্র আবিষ্কার করেছেন যা ‘‘নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র’’ নামে পরিচিত। তিনি গ্রহ এবং চাঁদের গতি ব্যাখ্যা করতে এই সূত্রটি প্রয়োগ করেন।

নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র–  ‘‘এই মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে এবং এই আকর্ষণ বলের মান বস্তু কণাদ্বয়ের ভরের গুণ ফলের সমানুপাতিক, এদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক এবং এই বল বস্তুদ্বয়ের কেন্দ্র সংযোজক সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে।’’

মহাকর্ষ বলের কারণেই পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহগুলো সূর্যের চারিদিকে ঘূর্ণায়মান থাকে। স্যার আইজাক নিউটন ১৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দে তার ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা গ্রন্থে এ বিষয়ে ধারণা প্রদান করেন এবং মহাকর্ষ বলের গাণিতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন।

উদাহরণস্বরুপ, চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে আকর্ষণ। মহাকর্ষ শক্তির ফলে সৌর জগতের প্রতিটি গ্রহ, উপগ্রহ, এবং নক্ষত্র, তাদের নিজ অক্ষে প্রতিনিয়ত ঘুরছে।

অভিকর্ষ কি?

পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা কোন বস্তুকে পৃথিবী নিজের দিকে আকর্ষণ করে। পৃথিবীর এই আকর্ষণ বলকে অভিকর্ষ (Gravity) বলে। অর্থাৎ, পৃথিবী তার কেন্দ্রাভিমুখে সকল বস্তুকে যে বল দ্বারা আকর্ষণ করে, সেই বলকে অভিকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ বল বলে। নিউটন সর্বপ্রথম          অভিকর্ষজ বল সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলেন। অভিকর্ষণ শক্তিকে F = Mg হিসাবে প্রকাশ করা যায় যেখানে g = অভিকর্ষ ত্বরণ।


উদাহরণস্বরুপ – একটি পাথর উপরদিকে নিক্ষেপ করলে পৃথিবী পৃষ্ঠের মধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে নিচের দিকে পড়ে। কারণ পৃথিবী ওই পাথরটিকে তার নিজস্ব বল দ্বারা নিজের দিকে আকর্ষণ করছে।

মহাকর্ষ ও অভিকর্ষের মধ্যে পার্থক্য


মহাকর্ষ

অভিকর্ষ

অর্থ

মহাকর্ষ হল মহাবিশ্বের যেকোন দুটি বস্তুর মধ্যে পারস্পারিক আকর্ষণ।

কোনো বস্তুর উপর পৃথিবীর আকর্ষণই অভিকর্ষ।

আকর্ষণ শক্তি

মহাকর্ষ বলের আকর্ষণ শক্তি অনেক কম।

অভিকর্ষ বলের আকর্ষণ শক্তি তুলানামূলক বেশি।

মান

মহাকর্ষীয় বলের মান ভর ও দূরত্বের উপর নির্ভর করে।

অভিকর্ষজ ত্বরণ ভরের উপর নির্ভর করে না।

বৈশিষ্ট্য

সব মহাকর্ষ বল অভিকর্ষ নয়।

অভিকর্ষ বল এক প্রকার মহাকর্ষ।

দিক

মহাকর্ষ হলো উর্দ্ধমুখি বল।

অভিকর্ষ হলো বস্তুর ওপর নিম্নমুখী বল।

সূত্র

মহাকর্ষ বলকে F = G M1M2/r2 হিসাবে প্রকাশ করা যায়। যেখানে G = মহাকর্ষীয় ধ্রুবক।

অভিকর্ষণ শক্তিকে F = Mg হিসাবে প্রকাশ করা যায়। যেখানে g= অভিকর্ষ ত্বরণ।

উদাহরণ

চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে আকর্ষণ।

একটি পাথর উপরদিকে নিক্ষেপ করলে পৃথিবী পৃষ্ঠের মধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে নিচের দিকে পড়ে।


Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন