পররাষ্ট্রনীতি কি? পররাষ্ট্রনীতির সংজ্ঞা, উপাদান

একটি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি তার আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ স্বার্থ রক্ষার জন্য যে কৌশলগুলো ব্যবহার করে এবং অন্যান্য রাষ্ট্র এবং অ-রাষ্ট্রীয় নেতাদের সাথে এটি কীভাবে যোগাযোগ করে তা নির্ধারণ করে। পররাষ্ট্রনীতির প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল একটি দেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা।

এছাড়া এটি হচ্ছে নির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক কার্যক্রম অনুসরণ করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি প্রক্রিয়া। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাতীয় স্বার্থ ও লক্ষ্য পূরণের জন্য পররাষ্ট্রনীতি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হতে পারে।

পররাষ্ট্রনীতির সংজ্ঞা

পররাষ্ট্রনীতি হল এমন একটি কৌশল এবং প্রক্রিয়ার সমষ্টি যার মাধ্যমে একটি জাতি তার নিজস্ব স্বার্থকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অন্যান্য জাতির সাথে যোগাযোগ করে।

পররাষ্ট্রনীতি হলো অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে নিজস্ব স্বার্থ সম্পর্কিত কার্যকলাপ এবং আচরণের প্রক্রিয়া।


পররাষ্ট্রনীতি হলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অন্যন্য রাষ্ট্রের সাথে প্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতি রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার সমষ্টি।

পররাষ্ট্রনীতি, যা অন্য রাষ্ট্রের সাথে একটি রাষ্ট্রের ক্রিয়াকলাপ এবং সম্পর্ককে নির্দেশ করে। পররাষ্ট্রনীতির সফলতা বা বিকাশ অভ্যন্তরীণ অবস্থা, রাষ্ট্রের নীতি, আচরণ বা নির্দিষ্ট ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান দ্বারা প্রভাবিত হয়। পররাষ্ট্রনীতির প্রধান তত্ত্বগুলো হল বাস্তববাদ, উদারতাবাদ, অর্থনৈতিক কাঠামোবাদ, মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্ব এবং গঠনবাদ।

পররাষ্ট্রনীতির উপাদান

প্রতিটি রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের জন্য পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন করে।পররাষ্ট্রনীতিকে প্রভাবিত করে এমন বিষয়গুলোকে পররাষ্ট্রনীতির নির্ধারক বলা হয়। একটি রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি নির্ধারণে নির্দিষ্ট উপাদান বা নির্ধারকগুলো মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। নিম্মে পররাষ্ট্রনীতির উপাদান সমূহ বর্ণনা করা হল।

পররাষ্ট্রনীতির নির্ধারক সমূহ

  • ভৌগলিক অবস্থান
  • জনসংখ্যা
  • ইতিহাস
  • অর্থনৈতিক সম্পদ
  • মতাদর্শ
  • সরকারের দক্ষতা এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রকৃতি
  • কূটনীতির গুণমান
  • আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিক্রিয়া
  • অন্যান্য রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া
১. ভৌগলিক অবস্থান
রাষ্ট্রের ভৌগলিক পরিবেশ এবং এর ভৌগলিক অবস্থানের রাজনৈতিক গুরুত্ব পররাষ্ট্রনীতিতে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। ভৌগোলিক অবস্থান বলতে রাষ্ট্রের আকার, অবস্থান এবং জলবায়ু।


২. জনসংখ্যা
জনসংখ্যাকে পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে, জনসংখ্যাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিমাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। অতীতের যুদ্ধে, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের বিশাল পদাতিক বাহিনী মার্কিন বাহিনীকে প্রতিহত করতে সাহায্য করেছিল।

৩. ইতিহাস
রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি তার ইতিহাস দ্বারা প্রভাবিত হয়। প্রতিটি জাতির ইতিহাসের রূপরেখা তৈরি হয় বিশেষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। একটি জাতির বিকাশের ইতিহাস জুড়ে, পররাষ্ট্রনীতির অনেক মৌলিক বৈশিষ্ট্য বিকশিত হয়। ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার আলোকে প্রতিটি জাতি তার পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি তৈরি করে।

৪. অর্থনৈতিক সম্পদ
পররাষ্ট্রনীতির প্রকৃতি এবং ধরন মূলত অর্থনৈতিক সম্পদ দ্বারা নির্ধারিত হয়। একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক শক্তি তার ক্রয়ক্ষমতার একটি সূচক বহন করে। সেই ক্ষমতার প্রভাব অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়।

অর্থনৈতিক কাঠামোর মূল উদ্দেশ্য হল দেশের ভূমি, শ্রম, পুঁজি এবং উদ্যোগকে উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা। উৎপাদিত অর্থনৈতিক সম্পদের বণ্টন, ভোগ, জনকল্যাণ, নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ইত্যাদিও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত।


প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ একটি দেশ সহজেই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মধ্যপ্রাচ্যের খনিজ তেল।

প্রাকৃতিক সম্পদ এবং শিল্প উন্নয়ন একটি দেশের আন্তর্জাতিক অবস্থার ভিত্তি। বর্তমান বিশ্বে প্রতিটি দেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্ভর করে শিল্পায়নের হার এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর।

৫. মতাদর্শ
প্রতিটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ দ্বারা পরিচালিত হয়। একটি রাষ্ট্রের মূল্যবোধ, নীতি, কর্মসূচী, উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যগুলো সেই আদর্শ দ্বারা পরিচালিত হয়। তাই এটি পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো আন্তর্জাতিক শান্তি, বন্ধুত্ব, পারস্পরিক সহযোগিতা, অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকার ইত্যাদি নীতিতে বিশ্বাসী।

পুঁজিবাদি মতাদর্শীরা দেশে-বিদেশে শোষণ-নিপীড়নের মাধ্যমে তার অস্তিত্ব বজায় রাখে। এই কারণেই পুঁজিবাদী দেশগুলো অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আগ্রাসী নীতি অনুসরণ করে।

৬. সরকারের দক্ষতা এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রকৃতি
সরকারের দক্ষতা ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব পররাষ্ট্রনীতির মূল উৎস ও শক্তি। রাষ্ট্রের ভূমিকা এবং পররাষ্ট্রনীতির ধরন নির্ভর করে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের গুণমানের ওপর।

মনস্তাত্ত্বিক কাঠামো, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং দূরদর্শিতা, ব্যক্তিত্ব এবং বিশ্ব রাজনীতির উপলব্ধি ইত্যাদি পররাষ্ট্রনীতির সিদ্ধান্তগুলো সরকারের নেতৃত্ব দ্বারা প্রভাবিত হতে বাধ্য।

৭. কূটনীতির গুণমান
কূটনীতির গুণমান পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি রাষ্ট্রের সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ভর করে তার কূটনৈতিক কৌশল এবং শ্রেষ্ঠত্বের উপর। রাষ্ট্রের প্রতিটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সরকারের কূটনৈতিক চাতুরী দ্বারা নির্ধারিত হয়।

Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন