নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কি? এর কাজ, ক্ষমতা ও যোগ্যতা

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কি

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নির্বাহী বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেট যারা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত।

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) থেকে নিয়োগপ্রাপ্তদের সাধারণত পদ হলো সহকারী কমিশনার, ম্যাজিস্ট্রেট নয়। তবে, ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১০(৫) অনুযায়ী সরকার চাইলে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরকে সীমিত আকারে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করতে পারে। তখন তাদেরকে বলা হয় “নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (Executive Magistrate)”। তারা সাধারণত তাদের নিজ নিজ এখতিয়ারে নির্বাহী এবং সীমিত বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কি? এর কাজ, ক্ষমতা ও যোগ্যতা, azhar bd academy

জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সমস্ত ফৌজদারি মামলার বিচার পরিচালনা করতে পারেন যেখানে জনশান্তি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি সম্পর্কিত কিছু বিষয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালনা করতে পারেন।


কোন সহকারী কমিশনার (প্রশাসন)-কে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পরিচয় দিতে হলে অবশ্যই  বলতে হবে “নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট’’ (Executive Magistrate)। একটি জেলার সর্বোচ্চ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বলা হয় ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। প্রতিটি প্রাশাসনিক জেলায় নিম্নলিখিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ থাকবেন:

(ক) জেলা প্রশাসক (DC)
প্রতিটি জেলা ও প্রতিটি মেট্রোপলিটন এলাকায় সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করবেন। মুখ্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জেলা প্রশাসক বলা হয়।
(খ) অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার (ADC)
সরকার যে কোনো অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনারকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিযুক্ত করতে পারবেন এবং সরকারের নির্দেশমত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের একজন জেলা প্রশাসকের পূর্ণ অথবা আংশিক ক্ষমতা থাকবে।
(গ) উপজেলা নির্বাহী অফিসার (UNO)
বাংলাদেশের সকল উপজেলার নির্বাহী অফিসার স্বীয় দায়িত্বের আওতায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
(ঘ) সহকারী কমিশনার (AC)
সহকারী কমিশনারগণ বিভিন্ন উপজেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর কাজ

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস এর প্রশাসন ক্যাডারগণ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কর্মক্ষেত্রে তারা সীমিত বিচারিক ক্ষমতা লাভ করেন। দি কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডউর, ১৮৯৮ এর বিধান অনুসারে, তাদের কর্মপরিধি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।


নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যায় (যেমন খাদ্যে ভেজাল, ইভটিজিং, মাদকদ্রব্য চোরাচালান, সরকারি সম্পত্তি বেদখল ইত্যাদির জন্য) মোবাইল কোর্ট বা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন (মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯, ধারা ৫)

পুলিশের ASP পদমর্যাদার ব্যক্তিদেরকে কিংবা বোর্ড পরিক্ষা ও বিভিন্ন সরকারী পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনের সময় সরকারি কলেজের শিক্ষকদেরকেও (বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার) সরকার ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা অর্পণ করতে পারেন, যাকে স্পেশাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বলে।

প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ সচিব। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তসমূহ সচিব হয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সহকারী কমিশনারের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়িত হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার যোগ্যতা

এক্সিকিউটিভ বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হতে চাইলে সাধারণত যেকোন সাবজেক্ট নিয়ে পড়ে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে উত্তীন্ন হতে হয়। বিসিএস থেকে নিয়োগপ্রাপ্তদের পদ হলো সহকারী কমিশনার, ম্যাজিস্ট্রেট নয়। তবে, ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১০(৫) অনুযায়ী সরকার চাইলে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরকে সীমিত আকারে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করতে পারে। জেলার সর্বোচ্চ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বলা হয় ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া মেট্রোপলিটন এলাকার জন্যও রয়েছে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট।


সরকার এ-ধরনের ম্যাজিস্ট্রটগনকে কিছু আইনি ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগ করার সুযোগ দিয়েছেন। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষক ও ডাক্তারগনও (ক্যাডার অনুযায়ী) মাঝে মাঝে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে থাকে।

প্রশাসনের কোনো সহকারী কমিশনার যখন ভূমি অফিসের দায়িত্ব পালন করেন, তখন তাকে বলা হয় সহকারী কমিশনার ভূমি (বা AC Land)। এরপর সহকারী কমিশনারগণ পদোন্নতি পেতে পেতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (UNO), জেলা প্রশাসক (DC) হন।

জেলা প্রশাসক পদোন্নতি পেয়ে বিভাগীয় কমিশনার, মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব ইত্যাদি পদ অর্জন করেন। 

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা

ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর তফসিল-iii এর বিধান অনুসারে, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সাধারণ ক্ষমতা হল-


১. ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার বা গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়ার এবং হেফাজতে রাখার ক্ষমতা। (ধারা-৬৪)
২. গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা, বা গ্রেপ্তারের জন্য তিনি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। (ধারা-৬৫)
৩. ওয়ারেন্ট অনুমোদন করার ক্ষমতা বা ওয়ারেন্ট ধারার অধীনে গ্রেফতারকৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অপসারণের আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা। (ধারা-৮৩, ৮৪, ৮৬)
৪. ডকুমেন্ট ইত্যাদির জন্য ডাক ও টেলিগ্রাফ কর্তৃপক্ষের দ্বারা অনুসন্ধান এবং আটক করার ক্ষমতা। (ধারা-৯৫)
৫. অন্যায়ভাবে বন্দী ব্যক্তিদের খোজার জন্য অনুসন্ধান পরোয়ানা জারি করার ক্ষমতা। (ধারা-১০০)
৬. সরাসরি তল্লাশি করার ক্ষমতা। (ধারা-১০৫)
৭. শান্তি বজায় রাখার জন্য নিরাপত্তা প্রয়োজনের ক্ষমতা (ধারা-১০৭)।
৮. শান্তি বজায় রাখতে বা ভাল আচরণের জন্য আবদ্ধ ব্যক্তিদের অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতা (ধারা-১২৪)।
৯. অভ্যাসগত অপরাধীদের কাছ থেকে ভাল আচরণের জন্য জামিন প্রদানের ক্ষমতা (ধারা-১২৬)
১০. বেআইনি সমাবেশকে ছত্রভঙ্গ করার নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা (ধারা-১২৭)
১১. ছত্রভঙ্গ করার জন্য বেসামরিক শক্তি ব্যবহারের ক্ষমতা (ধারা-১২৮)
১২. বেআইনি সমাবেশকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা (ধারা-১৩০)
১৩. জনসাধারণের উপদ্রবের ক্ষেত্রে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা হিসাবে একটি আদেশ জারি করার ক্ষমতা (ধারা-১৪২)
১৪. স্থানীয় তদন্ত করার জন্য তার অধস্তন যে কোন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে নিযুক্ত করার ক্ষমতা (ধারা-১৪৮)।

Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন