ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য

সংবিধান হল মৌলিক নীতি বা প্রতিষ্ঠিত বিধানগুলোর একটি সমষ্টি যা একটি রাষ্ট্র, সংস্থার আইনি ভিত্তি গঠন করে এবং সেটি কীভাবে পরিচালিত করা হবে তা নির্ধারণ করে।

প্রাথমিকভাবে দুই ধরনের সংবিধান রয়েছে যথা: লিখিত সংবিধান এবং অলিখিত সংবিধান। অলিখিত সংবিধান হল একটি সংবিধান যেখানে একটি রাষ্ট্রের আইনের অংশ একটি একক নথিতে লিখিত থাকে না। ব্রিটিশ সংবিধান একটি অলিখিত সংবিধান।

ব্রিটিশ সংবিধানটি ১২১৫ সালে ম্যাগনা কার্টা সনদের মাধ্যমে গ্রহণ হয়। ম্যাগনাকার্টার মাধ্যমে রাজার ক্ষমতাকে সীমিত করা হয়, এবং রাজাকে দেশের আইনের অধীন করা হয়।নিম্মে ব্রিটিশ সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করা হল।


ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য সমূহ, azhar bd academy

ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য সমূহ

  • অলিখিত
  • নমনীয় 
  • সংসদীয় সার্বভৌমত্ব
  • একক শাসনব্যবস্থা
  • সংসদীয় সরকার
  • সাংবিধানিক রাজতন্ত্র
  • আইনের শাসন
১. অলিখিত (unwritten): ব্রিটিশ সংবিধানের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এটি অলিখিত সংবিধান।  ব্রিটেনে কোন কোডিফাইড বা লিখিত সংবিধান নেই। ব্রিটেনের সংবিধান গঠিত হয়েছে মূলত সংসদের আইন, আদালতের রায়, কনভেনশন এবং চুক্তির দ্বারা।

২. নমনীয় (flexible): ব্রিটিশ সংবিধান একটি নমনীয় সংবিধান কারণ এটি সাধারণ আইনী প্রক্রিয়া দ্বারা সহজেই সংশোধন করা যেতে পারে। সংসদের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার দ্বারা সংবিধান পাস, সংশোধন এবং বাতিল করা যেতে পারে। 

৩. সংসদীয় সার্বভৌমত্ব (Parliamentary Sovereignty): মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেখানে সংবিধান সর্বোচ্চ, যুক্তরাজ্যের সেখানে সংসদ সর্বোচ্চ। সংসদীয় সার্বভৌমত্ব সরকারের আইন প্রণয়নকারী অংশের আধিপত্যকে অন্তর্ভুক্ত করে।


ফলে আইনসভা বা সংসদের ক্ষমতা সংবিধান দ্বারা সীমাহীন। এখানে জনগণই সার্বভৌম এবং চূড়ান্ত কর্তৃত্ব কিন্তু সংসদের রয়েছে দেশের যেকোনো বিষয়ে আইন প্রণয়ন ও বাতিল করার সীমাহীন ক্ষমতা।

৪. একক শাসনব্যবস্থা (Unitary System of Government): একক শাসনব্যবস্থা হল এমন একটি সরকার যেখানে সরকারের ক্ষমতা কেন্দ্রে কেন্দ্রীভূত করা হয় এবং কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের খুশিতে বিদ্যমান উপবিভাগগুলো থাকে। কেন্দ্রীয় সরকার উপযুক্ত মনে করলে যেকোন ইউনিট তৈরি করতে বা বিলুপ্ত করতে পারে।

৫. সংসদীয় সরকার (Parliamentary Government): ব্রিটিশ সংবিধান সরকারের মন্ত্রিসভা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। সরকারের একটি মন্ত্রিসভা ব্যবস্থা হল সরকারী প্রশাসনের একটি ব্যবস্থা যেখানে সরকারের নির্বাহী এবং আইন প্রণয়ন বাহুগুলোকে একত্রিত করা হয়।

সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ বা ক্ষমতাসীন দলের প্রধান। প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকার প্রধান, সরকারের নির্বাহী বিভাগের প্রধান এবং তিনি নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে আসায় আইনসভার নেতাও। তবে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপ্রধান নন।


সরকারের মন্ত্রিসভা ব্যবস্থার একটি বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্য হল যৌথ দায়িত্বের অস্তিত্ব। সরকারের মন্ত্রীরা এককভাবে ভোটারদের কাছে দায়বদ্ধ নন, তারা সমষ্টিগতভাবে ভোটারদের কাছে দায়বদ্ধ।

৬. সাংবিধানিক রাজতন্ত্র (Constitutional Monarchy): ব্রিটিশ সংবিধানের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের স্বীকৃতি। ব্রিটিশ রাজা রাষ্ট্রের প্রধান এবং আইন প্রণয়নের ক্ষমতা তার নেই কারণ এই ক্ষমতা নির্বাচিত সংসদের থাকে।

যদিও, ঐতিহাসিকভাবে, ব্রিটিশ রাজার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ছিল। ১৬৮৯ সালের বিল অফ রাইটস অ্যাক্ট এবং ১৭০১ সালের নিষ্পত্তির আইন দ্বারা এটি হ্রাস করা হয় যা ১৬৮৮ সালের গৌরবময় বিপ্লবের (Glorious Revolution) পরে পাস হয়েছিল। ব্রিটিশ রাজার ভূমিকা সংবিধান দ্বারা রাষ্ট্রের কিছু নির্দিষ্ট কার্যাবলীর মধ্যে সীমাবদ্ধ।

৭. আইনের শাসন (The Rule of Law): আইনের শাসন হল আইনের একটি নীতি বা ধারণা যা নির্ধারণ করে যে শ্রেণী বা মর্যাদা নির্বিশেষে সবাই আইনের কাছে সমান এবং দায়বদ্ধ। রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের আইনের প্রতি সমানভাবে দায়বদ্ধ কারণ তাদের ক্রিয়াকলাপ অবশ্যই আইনের নির্দেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

এই নীতি আইনের শাসন সমুন্নত রাখার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে। যদিও সংসদ সর্বোচ্চ এবং আইন প্রণয়ন করতে পারে, তবে সংসদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা হ্রাস করা হয় যদি এই ধরনের আইন মানবাধিকার আইন ১৯৯৮, মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তির বিধানগুলো লঙ্ঘন করে।

Do not enter any harmful link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Do not enter any harmful link

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন